Monday, September 30, 2013

বাজরিগার পালন শুরু করার পূর্বে জেনে নিন (CheckList)


বাংলাদেশে বাজরিগার পাখি কবে থেকে আছে তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান নেই। কিন্তু বনে বাজরিগার অনেক কিছু সহ্য করে বেচে থাকে। সেখানে তারা তাদেরকে প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেদের দেখাশোনা নিজেরাই করে। কিন্তু বাসাতে আমরা যারা পাখি পালন করি তাদের অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয়।

তারা নিজেদের রোগ সহজে বাহিরে প্রকাশ পেতে দেয় না। আমাদের তাদের শরীর এর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এমনঅনেক কিছুই আছে যা আমাদের বাজরিগারদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই পোস্টে আমরা এমনকিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো যা আমাদের বাজরিগারদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
>>>অধিক তাপমাত্রাঃ
বাংলাদেশ এর তাপমাত্রা অতি ধ্রুত পরিবর্তন হয়, তাই আপনার পাখির ঘরের তাপমাত্রা অতি দ্রুতভাবে জানার জন্য আপনি একটি থার্মোমিটার ব্যাবহার করতে পারেন। থার্মোমিটার আপনি টঙ্গী তে পাবেন। দাম মাত্রঃ
৬০-৭০ টাকা। এছাড়াও আরো কিছু বড় ভাইয়ারা বিদেশ থেকে থার্মোমিটার আমদানী
করে থাকে। তাদের আমদানীকৃত থার্মোমিটার গুলোর দাম ১২০০-১৫০০ টাকা মাত্র।র
বাংলাদেশ এর সামগ্রিক তাপমাত্রা অনুযায়ী বাজরিগার যেখানে রাখবেন সেখান
কার তাপমাত্রা সব সময় যেনো ২২-৩৫ ডিগ্রী এর মধ্যে থাকে। ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস
এর উপরে তাপমাত্রা উঠে গেলে সেই ক্ষেত্রে পাখির হিট স্ট্রোক এর কারনে
পাখির মৃত্যু হতে পারে। যদি তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে উঠে
যায় তবে সেই ক্ষেত্রে পাখির গায়ে পানি স্প্রে করতে হবে। আপনি ৩দিন পরপর ও
টিমসেন স্প্রে করতে পারেন। টিমসেন এর মূল্য মাত্র ২০ গ্রাম-১১০ টাকা মাত্র।
টিমসেন পাবেন মিরপুর ১ নম্বর এর সাগর এ্যাকুরিয়াম সহ অন্যান্য পাখির দোকানে, টঙ্গীর
পাখির দোকানে, নিমতলীর ৮৪ নম্বর দোকান সহ অন্যান্য পাখির দোকানে।
>>> অতিরিক্ত ঠান্ডাঃ
বাজরিগার এর আবাসস্থল এর তাপমাত্রা অবশ্যি হতে হবে ১৮ ডিগ্রী এর উপরে নতুবা, পাখির শরীরের উপরে তা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। পাখিকে যদি ঘরে পালন করে থাকেন তবে খাচাগুলোকে এমন ভাবে রাখুন যাতে করে ওদের শরীরে সরাসরি ফ্যান বা এসি এর বাতাস না লাগে। শীতকালে পাখির খাচাগুলোকে মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন।
>>> বিষাক্ত ধোয়াঃ বাজরীগার এর শ্বাস-প্রশ্বাস এর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল। এমন
অনেক জিনিস রয়েতছে যা হয়তো আমাদের জন্য ক্ষতিকারক নয় কিন্তু সেই সব জিনিস
আমাদের পাখিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সুবাসিত মোমবাতি, মশা মারার স্প্রে, বডি স্প্রে, এয়ার ফ্রেশনার এই সকল জিনিস গুলোতে ব্যাপক পরিমানে ক্যামিক্যাল ব্যাবহার করা হয়, তাই এই সকল জিনিসগুলোকে পাখিদের থেকে দূরে রাখা উচিত। বাংলাদেশে হয়তো এই সকল জিনিস গুলোর জন্য পাখিদের তেমন দূর্ঘটনায় পড়তে হয় না কিন্তু বিদেশে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে।
>>> শুকনো নেইল
পালিস বা শুকনো রং: বাজরিগার পাখি যা পায় তাই একবার হলেও চিবিয়ে দেখতে চায়।
কিন্তু এতে করে ওদের অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব ওদের থেকে শুকনো
নেইল পালিস বা শুকনো রং দূরে রাখুন।
>>> সিগারেট এর ধোঁয়া: আমরা
অনেকেই ধূমপান করি এইটি যেভাবে আমাদের নিজেদের ক্ষতি করে তার চেয়েও
বেশী ক্ষতি করে আমাদের আশেপাশে যারা থাকে। ঠিক একই ভাবে সিগারেট এর ধোঁয়া
আমাদের পাখিদের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। আমরা পাখির হাটে অনেকে সিগারেট হাতে
নিয়ে ধোঁয়া ছাড়ি আর পাখি দেখি। এটি ঠিক নয়।
>>> নন স্টিক
সসপ্যান এবং হিটারঃ এই সকল জিনিসপ্ত্র যা কিনা আমাদের রান্নাঘরে ব্যাপক পরিমানে হারে ব্যাবহৃত হয় এইগুলোতে যখন রান্না করা হয়, তখন যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় তা কিন্তু আমাদের পাখিদের ফুসফুসের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই যেকোনো মূল্যে আপনার পাখিদের কে রান্নার সময়ে যতটা পারবেন রান্নাঘর থেকে দূরে রাখুন। পারলে রান্নার শেষ হবার পরে, ভালোভাবে রান্নার গ্যাস চলে যাবার ২-৩ ঘন্টা পরে আপনার পাখিকে রান্নাঘরের আশেপাশে আনবেন।
>>> কোমল পানীয়ঃ
বাজরিগার এর পাশে কোন এ্যালকোহল, কফি, ক্যাফেইন বা সোডা কিছুই রাখবেন না। এই জিনিসগুলো ওদের হৃত্পিন্ডে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
>>> চকলেটঃ চকলেট এমন একটি জিনিস যা যেকোন জন্তু বা প্রানীর ক্ষেত্রে দূরে রাখা উচিত। এটি ওদের পাকস্থলীর সাধারন হজম প্রক্রিয়াতে সমস্যা করতে পারে। সামান্য একটু চকলেটের কোনাও ওদের পেটে গেলে সাথে সাথে ওদের বমি হতে পারে।
>>> পিয়াজ ও মাসরূমঃ অনেকে আমরা এগ ফুড বানানোর সময়ে মাশরুম বা পিয়াজ বা নানা জাতীয় সবজি ব্যাবহার করি। কিন্তু, আমরা যে সবজিই ব্যাবহার করি না কেনো আমাদের সর্বদা সেই সবজির স্বাস্থ্যগুন আমাদের জানা উচিত। যেমনঃ মাশরুম বা পিয়াজ কোনোটিই আমাদের প্রিয় বাজরিগার পাখিটির শরীর এর উপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আলু জাতীয় কোন খাবার ই ওদের কে সিদ্ধ না করে দেয়া উচিত না।
১০>>> এগ ফুডে
লবন বা চিনি এর ব্যাবহারঃ এগ ফুডে বা আমাদের পাখিদের জন্য তৈরী করা কোনো
খাদ্যেই লবন বা চিনি ব্যাবহার করা উচিত নয়। আমরা যে সকল সব্জি দিয়ে এগ ফুড
তৈরী করি তাতে যে পরিমাণে লবন বা চিনি থাকে এর বাইরে ওদের আর কোন বাড়তি
লবন বা চিনি এর প্রয়োজন পড়ে না। বাজরিগারদের যদি আপনি ফল দিতে চান তবে
তা খুব ই পরিমিত পরিমাণে দিন।
১১>>> ঠান্ডা খাবারঃ আমরা গরমকালে ঠান্ডা পানি বা খাবার খেতে খুব পছন্দ করি, কিন্তু বাজরিগার এর ব্যাপারে গরমকাল বা ঠান্ডার সময়ে কখনোই রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষন করা কোন খাবারঠান্ডা (ঠান্ডা বলতে এইখানে স্বাভাবিক ঠান্ডাকে বুঝানো হয় নি)অবস্থায় ওদের
কে দেয়া উচিত না। ফ্রিজ থেকে বের করে সাথে সাথে ওদের কে কন খাবার দিবেন না, এতে
করে ওদের শরীরের তাপমাত্রা সাথে সাথেই নেমে জেতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে তা ফিরে পেতে যে সময় লাগে তাতে শরীরের তেমন ক্ষতি হয় না কিন্তু বাজরিগার এর শরীরের তাপমাত্রা একবার নেমে গেলে তা পুনরায় ফিরে পেতে ওদের বেশকিছু সময় এর প্রয়োজন পড়ে। আর এই সময়ে ওদের শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ওরা যখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ বা দূর্বল থাকে বা মল্টিং এর সময়ে ওদের কে ভুলেও ঠান্ডা খাবার দিতে নাই।
{{{ মানুষ সহ যেকোন প্রানীর মুখের মুখের লালা ওদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক }}}
১২>>> ইলেকট্রনিক তারঃ আমাদের বাসায় আমরা যারা বাজরিগার পাখিকে ঘরে ছেড়ে দিয়ে পালি তাদের একটি কথা মনে রাখা উচিত আমাদের বাসার ইলেকট্রনিক তারগুলোতে কিছু লিক থাকতে পারে। আমাদের হয়তো তা অজানা বা আমাদের কাছে তা ধরা খায় না কিন্তু কারেন্টের একটু সামান্য ঝটকাও ওদের মৃত্যুর কারন হতে পারে। তাই পারত পক্ষে ওদের থেকে কারেন্টের তার দূরে রাখবেন।  এখানে বাজরিগার এর জন্য ঝুঁকির কারন হতে পারে এমন জিনিসগুলোর
একটি তালিকা দেয়া হলোঃ
>< পরিবেশগত
ঝুঁকিঃ
} অধিক তাপমাত্রা
}অধিক ঠান্ডা
} নন স্টিক সসপ্যান
এবং হিটার
} সুবাসযুক্ত মোমবাতি
} এরোসল স্প্রে
} পারফিউম
} এয়ার ফ্রেশনার
} নেইল পলিস
} পেইন্ট
} সিগারেট, কাগজ
পোড়ানোর ধোঁয়া সহ যেকোন কিছু পোড়ানোর ধোঁয়া
} ফিনাইল বা হারপিক সহ
যেকোন পরিষ্কারক দ্রব্য
>< খাবারের
ঝুঁকিঃ
} অ্যালকোহল
}কফি
} ক্যাফিন
} পানীয় সোডার জল
} চকলেট
} মাসরূম
} পেঁয়াজ
} আলু ( কাঁচা
বিপদজ্জনক,
দেয়ার পূর্বে সিদ্ধ করুন)
} মটরশুটি ( কাঁচা
বিপদজ্জনক,
দেয়ার পূর্বে সিদ্ধ করুন)
} লবণ
} চিনি
} ঠান্ডা খাবার
} মানুষ সহ যেকোন
প্রানীর মুখের মুখের লালা
>
ঝুঁকিঃ
} বিষাক্ত গাছপালা
}শুষ্ক নয় এমন
ডালপালা
} গরম চুলা এবং হিটার
} টয়লেট, বেসিন, সিংক
} জল ভর্তি বালতি বা
গামলা
} সিলিং (ঝুলন্ত) ও অন্যান্য খোলা ফ্যান।
} হেলানো চেয়ার যারনিচে পাখি চাপা পড়তে পারে।
} খোলা বা উন্মোচিতদরজা এবং জানালা
} ইলেকট্রনিক তার
} বড় কোনো প্রানী বাপাখি যা আপনার এই ছোট্ট পাখিকে কে আঘাত করতে পারে।
} পাখিকে নিয়ে ঘুমাবার সময়ে যদি ভূলে ওদের চাপা লাগে তবে ওদের ছোট্ট দেহটি মুচড়ে যেতে পারে। এই লেখাগুলো বিভিন্ন ইংরেজী ব্লগ, আমাদের দেশীয় ব্লগ  এবং আমার নিজস্ব জ্ঞান থেকে লিখা।


জরূরী মোবাইল নাম্বার সমূহঃ
সুলতান বাবু ভাইয়াঃ ০১৯১৪০৩১০৬৮
জরূরী ঔষধ এর দোকান এর নাম্বার সমূহঃ
রহমান ট্রেডার্সঃ ০১৭১৫৯১০৫৮৭ (নিমতলী)
বাজরিগার সম্পর্কিত সকল কিছু (২য় এবং চূড়ান্ত প্রকাশ) পিডিএফ টিডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন।
গ্রুপে জয়েন করতে ফেসবুকে লগইন করে এখানে ক্লিক করুন
দয়া করে এই লেখাগুলোকে কপি না করে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ থাকল। লেখাটি শেয়ার করতেচাইলে, আমাদের ব্লগ এর লিঙ্ক সহ শেয়ার করার অনুরোধ থাকলো
লেখকের অনুমতি ব্যাতিত এই ডক এর কোন লেখা হুবুহু অথবা আংশিক পরিরর্তন করা নিয়ম বহির্ভূত। অনুগ্রহপূর্বক আমাদের কোন লেখা চুরি করে নিজেকে নিয়ে অন্যের সামনে বাহাদুরি দেখাবেন না।
  Copyright and All Rights Reserved By,
    শাওন কৃষ্ণ সাহা (হীরা সাহা)



No comments: